Header Ads

বাংলাদেশী প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী মুসা ইব্রাহীম

বাংলাদেশের গৌরবের ইতিহাসে যুক্ত হলো নতুন একটি অধ্যায় এভারেস্ট বিজয়। বাংলাদেশের যুবক মুসা ইব্রাহিম প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পা রাখলেন এভারেস্টের চূড়ায়।বাংলাদেশের 16 কোটি মানুষের হৃদয়ে ভালোবাসার অভিষিক্ত করল এ অন্যান্য ইতিহাসের নায়ক মুসা ইব্রাহিমকে।পৃথিবীর বুকে বিস্ময়, রহস্য আর ভয়ঙ্কর সুন্দরের হাতছানি নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে যেসব পর্বত শৃঙ্গ তার মধ্যে সর্বোচ্চ উঁচু হিমালয় এভারেস্ট।সাদা বরফে ঢাকা আর রহস্যের মায়াজালে বোনা এ পর্বত শৃঙ্গ যুগ ধরে মৃত্যুর হাতছানি দিয়ে ডাকছে মানুষকে।আর মানুষ অজয় দুৰ্ভেদ প্রকৃতির রহস্য কে জয় করার স্বপ্নে নেমেছে অভিযাত্রা।

এভারেস্ট অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘ এক ইতিহাস। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 8848 মিটার অর্থাৎ 29,028 ফুট উঁচু এ পর্বত শৃঙ্গের গুরুত্ব প্রথম ধরা পড়ে 1852 সালে।বাঙ্গালী সার্ভেয়ার রাধানাথ শিকদার প্রথম অংক কষে দেখান যে, এভারেস্টই পৃথিবীর সর্বোচ্চ উচ্চতম পর্বত শৃঙ্গ।পরে সেই সময়কার ভারতবর্ষের ইংরেজ সার্ভেয়ার জেনারেল স্যার এভারেস্টের নাম অনুসারে এর নাম রাখা হয় এভারেস্ট।অসংখ্য মানুষের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এভারেস্ট খুব সহজে জয় করা যায় না।1953 সালের 29 শে মে তেনজিং নোরগে ও এড মন্ডল হিলারি যখন এভারেস্টের চূড়ায় নিজেদের পদ-চিহ্ন দিলেন তখন এভারেস্ট কে জয় করে রচিত হলো মানুষের গর্বিত ইতিহাস।পরে বহু পর্বতারোহী মৃত্যুকে উপেক্ষা করে এভারেস্ট জয়ের অংশ নিয়েছেন।  কেউ পেরেছেন, কেউবা হারিয়েছে তাদের জীবন। এতো কিছু সত্বেও 2008 সালের 5 ই আগস্ট পর্যন্ত পাওয়া বেসরকারি হিসাব মতে 64 টি দেশের 3,681 জন পর্বতারোহী এভারেস্ট জয় করেছেন।আর এভারেস্ট জয়ীদের তালিকায় একমাত্র বাংলাদেশি সদস্য লালমনিহাটে 30 বয়সী এক যুবক মুসা ইব্রাহীম।
The picture is taken from unsplash .
বাঙালির পক্ষে এভারেস্ট বিজয় স্বপ্নের মতো হতে পারে। কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছে মুসা ইব্রাহিম ।তার জীবনের স্বপ্ন ছিল এভারেস্ট ওঠা। যেদিন তার বোন পাহাড় দেখিয়েছিলেন, সেদিন থেকেই ওই পাহাড়ের মায়ায় বাধা পড়েছিলেন মুসা। তার এ মায়াই তাকে অনুপ্রাণিত করেছ এভারেস্টের যাত্রা। 2002 সালে অন্নপূর্ণা পর্বত 12,464 ফুট ওঠার মধ্য দিয়ে তার এ প্রচেষ্টা সূত্রপাত। 2010 সালে এভারেস্টে বাংলাদেশ থেকে 10 জনের একটা দল পাঠানোর লক্ষ্যে 2004 সালে পরিকল্পনা গ্রহণ করে মুসা ইব্রাহিম।এদিকে নিজেকেও তিনি প্রস্তুত করেছিলেন দিনে দিনে। 2002 সালে অন্নপূর্ণা থেকে ফেরার পর তিনি একটা পর একটা পর্বতাহোরণের প্রশিক্ষণ ও অভিযানে অংশ নিয়ে থাকেন ।

কর্মজীবনে ''দ্য ডেইলি স্টার'' এর সম্পাদক হিমালয়ন মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিউট থেকে দুই দফা গত ছয় বছরে দুটো পেশাদারী পর্বতাহোরণের প্রশিক্ষণ নেন।অর্থনৈতিক কারণে তার এভারেস্ট জয় প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল।শুরুতে তার ক্লাব নর্থ আলপাইন, এর 10 জন কে এভারেস্ট পাঠাতে বাজেট ধরা হয় দুই কোটি 70 লাখ টাকা। কিন্তু অর্থের অভাবে তার একা হিমালয়ে আরোহন এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই কারণে যে 50 লক্ষ টাকার প্রয়োজন তা জোগাড় করতে তিনি রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। তার দীঘ আত্মবিশ্বাসই তাকে টেনে নিয়ে গেল স্বপ্ন পূরণের অনিশ্চিত পথে।মুসা ইব্রাহিম 2010 সালে 20 এপ্রিল এভারেস্ট তিব্বতের অংশ দিয়ে অভিযান শুরু করেন। তিনি হিমালয়ান গাইডস নেপাল এর সহযোগিতায় অভিযানে অংশ নেন। এ অভিযানে তার সহযোগী ছিলেন কৈলাশ সোমবাহাদুর ও কাতিলা লাখছা ।দীর্ঘ 33 দিন ধরে আরোহণে পর 34 তম দিনে তিনি এভারেস্ট  চূড়ায় উঠতে সক্ষম হন।পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গের প্রায় 30 মিনিটের মতো তিনি অবস্থান করেছিলেন। হিমালয়ের শীর্ষে এ সময় তার মনে কাজ করেছিল ভিন্ন দুটি অনুভূতি ।

এক দেশের 16 কোটি মানুষের প্রত্যাশা পূরণের আনন্দ দ্বিতীয় কিভাবে মৃত্যু গিরিপথ দিয়ে নামবেন তিনি।পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় ওঠার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে মুসা ইব্রাহিম বলেছিলেন, বাংলাদেশকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠানোর অনুভূতিটা সত্যিই অন্যরকম। এটা কখনোই পুরোপুরি ভাষায় ব্যক্ত করা যাবে না ।এ অভিযানে আমার সঙ্গে ছিল গোটা বাংলাদেশ আর বাংলাদেশের সব মানুষ ।এছাড়াও তার মনে হয়েছিল আমি সত্যিই এভারেস্ট জয় করেছি এবং দেশের 16 কোটি মানুষের আশা পূরণ করতে পেরেছি। এটাই সবচেয়ে বড় বিষয়।

এভারেস্টের চূড়ায় ওঠা যতটা কঠিন তার চেয়ে সবচেয়ে বড় কঠিন হচ্ছে এভারেস্ট থেকে নামা। এভারেস্ট থেকে নামার সময় সামান্য অসচেতনাই মৃত্যুর কোলে ডেলে দিবে।পানির পিপাসায় মুজিব শুকিয়ে কাঠ। শরীরে কোন শক্তি নেই ।তিনি দেখলেন পেছনে তার পাশে মৃত্যু অভিযাত্রীদের লাশ। শেরপাদের কাছ থেকে অল্প পানি পান করে মৃত্যু বিছানো গিরি পথ বেয়ে নামতে থাকলেন। মুসা পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলেন একজন অস্ট্রেলিয়ার যাত্রী তিনি মুসাকে কিছু পানি ও পাওয়ার জেলে খেতে দিলেন। এতে মুসা কিছু শক্তি পেয়ে আস্তে আস্তে বেলা 11 টার দিকে ক্যাম্প3 এ ফিরে এলেন। 

এখানে এসে শরীর আর মোটেও চলছিল না। কিন্তু তিনি জানতেন যত বেশি সময় এখানে থাকবে ততই মৃত্যুর কাছে আসবে।বেলা 12 টার দিকে তিনি আবার নামতে শুরু করলেন সবাই তাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। তিনি নামলেন আস্তে আস্তে ।ক্যাম্প2 দিয়ে আসতে সন্ধ্যা নেমে এলো অন্ধকার হয়ে গেল চারপাশ।

1 লা জুন 2010 সালে দেশের উদ্দেশ্যে কাঠমুন্ডু থেকে রওনা দেন মুসা ইব্রাহিম। বিকেল 4 টা 16 মিনিটে বিমানবন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করেন সঙ্গে ছিল স্ত্রী ও পুত্র।সেখানে তাকে স্বাগত জানাতে, উপস্থিত ছিলেন তার ক্লাবের সদস্য বৃন্দ এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রতিনিধি।এমন অসামান্য কর্তৃত্ব অর্জন করে দেশে ফিরলেন দেশের জনগণ তাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানান। এক অভিনন্দন বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা উঠিয়ে গোটা বিশ্বে মুসা ইব্রাহীম বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। তার এ বিজয় আমি সহ গোটা বিশ্ববাসী গর্বিত এবং আনন্দে উদ্ধৃত উদ্বেলিত। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এর পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন জানানো হয়।ইতিহাসে এই প্রথম কোন বাংলাদেশী নাগরিক সেই সম্মান ও সাফল্য অর্জন করেছিল ।পৃথিবীর শীর্ষে হিমালয় হিমালয়ের শীর্ষে এভারেস্ট তার শীর্ষে বাংলাদেশের পতাকা হাতে এক বাংলাদেশী বাঙালির পা ফেলার সেই অসামান্য ঘটনাটি ঘটলো।

No comments

Theme images by Petrovich9. Powered by Blogger.